আজ বুধবার, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভাই…ও ভাই! আমারে বাঁচান

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল খুচরো কয়েকটি পয়সা আর কাপড়ের একটি ঝোলা ব্যাগ। রক্তে ভিজছিল পিচ ঢালা সড়ক। তখনও বাসের নিচে পড়ে ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী শাহনাজ। দুই পা ও ডান হাত সম্পূর্ণ থেতলে গেলেও বেঁচে থাকার সাধ ছিল তার। ভ্যানগাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘ভাই…ও ভাই! আমারে বাঁচান’।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের ডিআইটি এলাকায় বঙ্গবন্ধু সড়কে ওই নারীকে পিষে দেয় সরকারি পরিবহন বিআরটিসি’র যাত্রীবাহী একটি এসি বাস। শাহনাজ নামে ওই নারী ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। থাকতেন নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে। তবে তার স্বজন বা পরিচিতের কারোর কোন খবর দিতে পারেননি কেউ।

প্রত্যক্ষদর্শীদের জানান, নগরীর আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের সামনে বঙ্গবন্ধু সড়ক পার হওয়ার সময় বিআরটিসির দ্রæতগামী বাসটি (ঢাকা মেট্রো-ব: ১৫-৫৫০৪) ওই নারীকে পিষে দেয়। ঘটনার পরপরই পালিয়ে যায় বাসের চালক আব্দুল মজিদ শেখ। ঢাকার উদ্দেশে শহরের মন্ডলপাড়া থেকে যাত্রীবাহী ওই বাসটি ছেড়ে আসে।

ঘটনার পর ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় বেশ কিছুক্ষন ওই বাসের নিচেই পড়ে ছিলেন শাহনাজ। পরে এক যুবকের সহযোগিতায় ভ্যানযোগে তাকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসাতালে নিয়ে যান এই প্রতিবেদক। তার দুই পা এবং ডান হাত পুরোপুরি থেতলে গেলেও প্রাণ ছিল তার দেহে। মৃদু স্বরে বলছিলেন, ‘ভাই…ও ভাই! আমারে বাঁচান’। ওই নারীর পরিচিত কেউ না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতালের এক ব্যক্তির মাধ্যমে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা সমাজসেবা অধিদপ্তরের লোকজন এগিয়ে আসার কথা থাকলেও তাদের কোন খোঁজ মেলেনি। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় ওই সময় হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নাজমুল হাসান বিপুল টাকা দিয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। নারায়ণগঞ্জ থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত যাওয়ার পর দুপুর আড়াইটায় ওই নারীর মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ওই নারীকে পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। পথেই তার মৃত্যু হলে মরদেহ হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এ বিষয়ে সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল হাই বলেন, বাসটি (ঢাকা মেট্রো-ব: ১৫-৫৫০৪) জব্দ করা হয়েছে। চালককে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বিআরটিসির নারায়ণগঞ্জ ডিপোর ব্যবস্থাপক আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, সে সময় বাসটি চালাচ্ছিলেন আব্দুল মজিদ শেখ নামে এক চালক। পুলিশ এ ঘটনা তদন্ত করছেন। তদন্ত সাপেক্ষে বিআরটিসির পক্ষ থেকেও এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।